হানিমুন পিরিয়ড

হানিমুন শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। বিযের পরপরই নব দম্পতি হানিমুনে চলে যায়। এটা নিয়ে সবার মধ্যে অনেক আগ্রহ, ভাল লাগা কাজ করে। তবে শুধুমাত্র বিয়ে নয়, আরো অনেক ক্ষেত্রেই এই হানিমুন পিরিয়ডটা দেখা যায়। এই যেমন দেখুন প্রেমের ক্ষেত্রেও, নতুন নতুন প্রেমে কাপলরা ফেসবুকে ক্যাপশন দেয় “Made for Each Other”/ “Best Couple”/ ” আমৃত্যু একসাথে থাকবো” ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর দেখা যায়, দুইজনের মধ্যে প্রচুর ঝগড়াঝাঁটি, এমনকি ব্রেকআপ-ডিভোর্সও হয়ে যায়। কেন হয়?? আচ্ছা কেনই বা বিজনেস পেজে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি ভাবছেন??! আরে দাঁড়ান, বলছি…
সম্পর্কে যেমন একটা হানিমুন পিরিয়ড থাকে, তেমনি বিজনেসেও একটা হানিমুন পিরিয়ড থাকে। যেটা আমরা অনেকে জানি না বা জানলেও সেভাবে ভাবি না। এই হানিমুন পিরিয়ডটাতে আপনার সবকিছুই ভাল লাগবে। প্রচুর অর্ডার আসবে, প্রচুর মানুষের সাড়া পাবেন। আপনার মনে হবে আরে আমি তো সফল। ঠিক যেমনটা দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে ২ মাস বিজনেস করেই নিজেকে সফল উদ্যোক্তা দাবি করেন। কিন্তু আর কয়েকমাস পরেই দেখা যায় তিনি ব্যবসা গুটিয়েই চলে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন??

যে কোন সম্পর্কে বা বিজনেসে সাধারণত ৪ টা স্টেজ থাকে।
১. হানিমুন,
২. ক্রাইসিস,
৩. রিকোভারি,
৪. এডজাস্টমেন্ট৷

হানিমুন পিরিয়ডে আপনার সবকিছুই ভাল চলবে। আপনি প্রচুর পরিমান অর্ডার পাবেন, এমন যে অর্ডারের চাপে আপনি বেদিশা হয়ে যাবেন৷ এই সময়ে আপনার কোন ভুল, দোষ ত্রুটি আপনার চোখে পড়বে না। চোখে পড়লেও সেটাকে সবাই তেমন বড় কিছু ভাববেন না, আপনিও সে-সব নিয়ে অত মাথা ঘামাবেন না। আপনার মনে হবে আপনি সফল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পিরিয়ডটা কতদিন চলে?? একটা বিজনেসের হানিমুন পিরিয়ড মোটামুটি ৬ মাস থেকে ১ বছর।

হানিমুন পিরিয়ড়ের পরে আসে ক্রাইসিস পিরিয়ড। এই সময়টাতে আপনার সেল একটু একটু করে কমতে থাকে, বিজনেসে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ১০ টা কাজ করলে তারমধ্যে ৬-৭ টাই ভুল হয়ে যায়, সবাই আগেরমত আর আগ্রহ দেখায় না। এই সময়টাতে সবার মধ্যে একটু হতাশা চলে আসে। কেউ কেউ এই ধাক্কাটা সামলে নিয়ে টিকে থাকতে পারেন৷ আর কেউ কেউ ঐ ২ মাসে সফল উদ্যোক্তার মত ধাক্কাটা সামলাতে না পেরে বিজনেস বন্ধ করে দেন। এই সময়টাতেই হয় একজন উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ির চূড়ান্ত পরীক্ষা।

ক্রাইসিস পিরিয়ডের পরে আসে রিকোভারি পিরিয়ড। এমন সময়টাতে আপনার সেলস গ্রাফ আবার একটু একটু করে উপরের দিকে উঠতে থাকে। বিজনেসের অবস্থাও একটু একটু করে ভাল হতে থাকে। ক্রাইসিস পিরিয়ড়ের কিছু কিছু পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত আপনাকে এই পিরিয়ড়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করে ৷ এই সময়টাতে আপনাকে প্রচুর কাজ করতে হয়…

রিকোভারি পিরিয়ডের পরে আসে এডজাস্টমেন্ট পিরিয়ড। এই পিরিয়ডে আপনার সেলস গ্রাফটা আবার অনেকটা হানিমুন পিরিয়ডের মত হয়ে উঠে ৷ আপনার বিজনেস গ্রাফটা উপরের দিকে উঠতে থাকে। এই সময়টাতে আপনি কম পরিশ্রম করলেও ভাল রেজাল্ট পাওয়া যায়। এই পিরিয়ডটাতে সবার পক্ষে আসা সম্ভব হয় না। মাত্র ৩০-৪০% বিজনেসই এই পিরিয়ড পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে৷ বাকিরা তার আগেই এই লম্বা রেস থেকে ঝড়ে পড়েন। এই স্টেজে আসতে পারলে তবেই আপনি নিজেকে কিছুটা সফল দাবী করতে পারেন।
শুধুমাত্র বিজনেস নয়, খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের সবকিছুই এই গ্রাফটার মধ্য দিয়ে যায় । শুরুতে যে প্রেম-বিয়ের কথা বললাম সেটাও কিন্তু এই গ্রাফটার মধ্য দিয়ে যায়, যার ফলে হানিমুন পিরিয়ড়ে যারা বেস্ট কাপল ছিল, ক্রাইসিস পিরিয়ডে দেখা যায় তাদেরই ব্রেকআপ হয়ে যায় ।

এই ফানেলটা যেহেতু হবেই হবে তাই আমাদেরও সেভাবেই প্ল্যানিং করা উচিত। হানিমুন পিরিয়ডেই নিজের সব শক্তি খরচ করে ফেলা যাবে না, যে কোন কাজকেই ভালভাবে এনালাইসিস করতে হবে। ছোটখাট ভুলগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে শুধরে নিতে হবে ৷ তবেই আমরা এডজাস্টমেন্ট পিরিয়ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো…

(সংগৃহীত)

Scroll to Top